অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতে আটক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ শিগগির দেশে ফিরবেন। দেশে ফেরার পর গ্রেপ্তারও হতে পারেন তিনি। পুরোনো মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে হেফাজতে নিতে পারে। সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে দেশে অন্তত ১৫টি মামলা রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং জজ আদালতের আপিলে যে রায় দেওয়া হয়েছে, তার অনুলিপি আজ পাওয়ার কথা রয়েছে। এর পরই দেশে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ থেকে যোগাযোগ করা হলে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, শুক্রবার রায়ের কপি পেতে পারি। সেটা আগে পাই তারপর চিন্তা করব। এর আগে এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে রাজি নই।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) হায়দার আলী খান সমকালকে বলেন, যদি বাংলাদেশে সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা ও পরোয়ানা থাকে, তাহলে পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া ভারতের আদালতের রায়ের কোনো পর্যবেক্ষণ রয়েছে কিনা সেটাও দেখব।
ভারতের আদালতের রায়ের পর কোন প্রক্রিয়ায় সালাহউদ্দিন দেশে ফিরবেন– এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইন্টারপোলের বাংলাদেশের শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
গত মঙ্গলবার ভারতের শিলং জজ আদালতের রায়ে বলা হয়– অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতে আটক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের দেশে ফিরতে বাধা নেই। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর নিম্ন আদালতে তাঁকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। তবে ভারত সরকার আপিল করায় তিনি তখন দেশে ফিরে আসতে পারেননি। দীর্ঘ চার বছর পর জজ আদালত নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে ভারত সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সালাহউদ্দিন আহমেদকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন।
২০১৫ সালের মার্চে যখন সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হন, ওই সময়ে বিএনপি পুরোদমে আন্দোলনে, তখন দলের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছিলেন সালাহউদ্দিন। ওই সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্য, তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ অনেক নেতা যখন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে, তখন সালাহউদ্দিন আহমেদ দলের গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্ব পালন করেন।
দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ, ২০১৫ সালের ১০ মার্চ গভীর রাতে রাজধানীর উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ১৩/বি নম্বর সড়কের ৪৯/বি নম্বর বাড়ির ২/বি নম্বর ফ্ল্যাট থেকে র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সালাহউদ্দিনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এর দুই মাস পর পাশের দেশ ভারতে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় তাঁকে। নিখোঁজের ৬৩ দিন পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ সালাহউদ্দিনকে উদ্ধারের পর সেখানকার একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে। এর পর দিন তাকে শিলং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় মেঘালয় থানা পুলিশ। একই বছরের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযোগ গঠন করা হয়। প্রায় সাড়ে তিন বছর মামলার কার্যক্রম চলার পর ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়। ওই বছরের ২৬ অক্টোবর আদালতের রায়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে করা মামলায় নির্দোষ হিসেবে রায় পান সালাহউদ্দিন আহমেদ। পরে আবার সরকার পক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে।
পাঠকের মতামত